Biographyeducation

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জীবনী – বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানা অজানা তথ্য

 

 বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় বাংলাদেশের মানুষ ও তাদের কল্যানের জন্য ব্যায় করেছেন । বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সমগ্র বাংলাদেশকে সংঘবদ্ধ করতে তাঁর ভূমিকা ছিল অপরিসীম । প্রত্যেক বাংলাদেশীর জন্য জাতির পিতার জীবনী সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা অপরিহার্য ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জীবনী - বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানা অজানা তথ্য

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্ম ও পরিচয় :

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ।গোপালগঞ্জ বর্তমানে একটি জেলা । তাঁর পিতার নাম শেখ লুৎফুর রহমান এবং তাঁর দাদার নাম শেখ আবদুল হামিদ । তাঁর মাতার নাম সাহেরা খাতুন এবং নানার নাম আবদুল মজিদ। তাঁর আকিকার সময় তাঁর নানা আবদুল মজিদ বঙ্গবন্ধুর নাম রেখেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান এবং বলেছিলেন এ নাম জগৎ জোড়া খ্যাত হবে । পিতা-মাতা তাকে আদর করে
‘খোকা’ বলে ডাকতেন । এবং ভাইবোন ও গ্রামবাসির নিকট তিনি ‘মিয়াভাই’ বলে পরিচিত ছিলেন । বর্তমানে ১৭ই মার্চ সারাদেশে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালিত হয় ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জীবনী - বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানা অজানা তথ্য

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর শৈশব :

বঙ্গবন্ধু বলেন , ছোট সময়ে আমি খুব দুষ্ট প্রকৃতির ছিলাম। খেলাধুলা করতাম, গান গাইতাম এবং খুব ভাল ব্রতচারী করতে পারতাম ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শৈমব সম্পর্কে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা তাঁর “শেখ মুজিব আমার পিতা” গ্রন্থে বলেন –

আমার আব্বার শৈশব কেটেছিল টুঙ্গিপাড়ার নদীতে ঝাঁপ দিয়ে মেঠো পথের ধুলোবালি মেখে।বর্ষার কাদাপানিতে ভিজে

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর শিক্ষাজীবন :

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রাথমিক শিক্ষার শুরু হয় নিজ গৃহে গৃহশিক্ষকদের হাত ধরে । তাঁদের কাছে বঙ্গবন্ধু আরবি ,বাংলা , ইংরেজি ও অংক শিখতেন । পরবর্তীতে তিনি গিমাডাঙ্গা স্কুলে ভর্তি হন । সেখানে তিনি ৩য় শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। একবার বর্ষাকালে নেীকা করে স্কুল থেকে ফেরার পথে নেীকাডুবি হলে তাঁকে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে ভর্তি করা হয় । সেখান থেকে তিনি ৯৪২ সালে এন্ট্রাস পাস করেন । পরবর্তীতে তিনি কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন । সেখানে তিনি বেকার হোস্টেলে থাকতেন । ১৯৪৭ সালে তিনি ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। দেশভাগের পর তিনি ঢকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তিহন । তিনি ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ছাত্র ছিলেন। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জীবনী - বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানা অজানা তথ্য

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর বিবাহ :

বিবাহ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বলেন , আমার যখন বিবাহ হয় তখন আমার বয়স বার তেরো বছর হতে পারে ।  আমি শুনলাম আমার বিবাহ হয়েছে , তখন কিছুই বুঝতাম না । রেণুর বয়স তখন বোধহয় তিন বছর হবে ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর প্রিয় খেলাধুলা :

বঙ্গবন্ধু একজন দক্ষ ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন এমনকি তাঁর পিতাও ফুটবল খেলা পছন্দ করতেন । এ সম্পর্কে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা বলেন , আমার আব্বার পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলার প্রতি দারুন ঝোঁক ছিল । বিশেষ করে ফুটবল খেলা খুব পছন্দ করতেন । মধুমতি নদী পার হয়ে চিতলমারী ও মোল্লাহাট যেতেন খেলতে । এদিকে আমার দাদাও খেলতে পছন্দ করতেন ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর বেরিবেরি রোগ :

বঙ্গবন্ধু ছোট বেলায় বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হন । এ সম্পর্কে তিনি বলেন । ১৯৩৪ সালে যখন আমি ৭ম শ্রেনীতে পড়ি তখন ভীষণভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি । হঠাৎ বেরিবোরি রোগে আক্রান্ত হয়ে আমার হার্ট দূর্বল হয়ে পড়ে । আব্বা আমাকে নিয়ে কলকাতায় চিকিৎসা করাতে যান । কলকাতার বড় বড় ডাক্তার তার চিকিৎসা করাতে থাকেন ।

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর গ্লুকোমা রোগ :

বঙ্গবন্ধু ছোট বেলায় চোখের গ্লুকোমা রোগে আক্রান্ত হন । এসম্পর্কে তিনি বলেন , ১৯৩৬ সালে আবার আমার চক্ষু খারাপ হয়ে পড়ে । গ্লুকোমা নামে একটা রোগ হয় । ডাক্তারদের পরামর্শে আব্বা আবার আমাকে নিয়ে কলকাতায় রওনা হলেন চিকিৎসার জন্য । ডাক্তার সাহেব আমার চক্ষু অপরেশন করাতে বললেন । অপরেশন করা হলো । আমি ভাল হলাম । তবে কিছুদিন পড়াশুনা বন্ধ রাখতে হবে , চশমা পরতে হয় আমাকে ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর শিক্ষা বিরতি :

অসুস্থার কারণে বঙ্গবন্ধু ৪ বছর লেখাপড়া করতে পারেননি । এ সম্পর্কে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন , স্কুলে পড়তে পড়তে আব্বার বেরিবেরি রোগ হয় এবং চোখ খারাপ হয়ে যায় । ফলে চার বছর লেখাপড়া বন্ধ থাকে । তিনি সুস্থ হবার পর পুনরায় স্কুলে ভর্তি হন ।

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জীবনী - বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানা অজানা তথ্য


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর মুসলিম সেবা সমিতি :

বঙ্গবন্ধুর একজন স্কুল মাস্টার একটা সংগঠন গড়ে তোলেন যার সদস্যরা বাড়ি-বাড়ি ঘুরে ধান , চাল , টাকা , জোগার করে গরিব মেধাবী ছেলেদের সাহায্য করতেন । বঙ্গবন্ধু সেই দলের অন্যতম সক্রিয় কর্মী ছিলেন ।
বঙ্গবন্ধু বলেন , মাস্টার সাহেব গোপালগঞ্জে একটা ” মুসলিম সেবা সমিতি ” গঠন করেন যার দ্বারা গরিব ছেলেদের সাহায্য করতেন । মুষ্টি ভিক্ষার চাল উঠাতেন প্রত্যেক মুসলমানের বাড়ি থেকে । প্রত্যেক রবিবার আমরা থলি নিয়ে বাড়ি বাড়ি থেকে চাউল উঠিয়ে আনতাম এবং এই চাউল বিক্রি করে তিনি গরিব ছেলেদের বই এবং পরীক্ষার অন্যান্য খরচ দিতেন ।
এছাড়া তার দানশীলতা সম্পর্কে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা বলেন , ” দাদির কাছে শুনেছি আব্বার জন্য মাসে কয়েকটা ছাতা কিনতে হতো কারণ কোন ছেলে গরিব , ছাতা কিনতে পারে না , দূরের পথ রোদ বৃষ্টিতে কষ্ট হবে দেখে তাদের ছাতা দিয়ে দিতেন । এমনকি পড়ার বইও মাঝে মাঝে দিয়ে আসতেন ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর প্রথম বিদ্রোহ :

এ সম্পর্কে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা বলেন , কৈশরেই তিনি খুব অধিকার সচেতন ছিলেন । একবার যুক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরেবাংলা গোপালগঞ্জে সফরে যান এবং স্কুল পরিদর্শন করেন । সেই সময় সাহসী কিশোর শেখ মুজিব তাঁর কাছে স্কুলঘরে বর্ষার পানি পড়ার অভিযোগ তুলে ধরেন এবং মেরামত করার অঙ্গীকার আদায় করে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর রাজনীতিতে অংশগ্রহণ :

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর শেখ মুজিব আমার পিতা গ্রন্থে উল্লেখ করেন , গোপালগঞ্জ স্কুল খেকে ম্যাট্টিক পাস করে তিনি কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে পড়তে যান । তখন বেকার হোস্টেলে থাকতেন । এই সময় তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সংস্পর্শে আসেন । হলওয়ে মনুমেন্ট আন্দলনে জড়িয়ে পড়েন সক্রিয়ভাবে । এই সময় থেকে তাঁর রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ শুরু হয় ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জীবনী - বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানা অজানা তথ্য

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম আন্দোলন :

এ সম্পর্কে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর শেখ মুজিব আমার পিতা গ্রন্থে উল্লেখ করেন , এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই বঙ্গবন্ধু প্রথম পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছিলেন । বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া পূরণের জন্য পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা লগ্নে ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ছাত্রলীগ গঠন :

পকিম্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও নঈমউদ্দিন আহমেদ মিলে ১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারী পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ গঠন করেন । বঙ্গবন্ধু বলেন , ১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারী তারিখে ফজলুল হক মুসলিম হলের এ্যাসেম্বলি হলে এক সভা ডাকা হলো , সেখানে স্থির হল একটা ছাত্র প্রতিষ্ঠান করা হবে । যার নাম হবে ” পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম আওয়ামী লীগ ”

আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন :

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয় । এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী । সাধারন সম্পাদক ছিলেন শামছুল হক এবং বঙ্গবন্ধু ছিলেন জয়েন্ট সেক্রেটারি । ১৯৫৩ সালে বঙ্গবন্ধু আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক নিযুক্ত হন । ১৯৫৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর দলটির নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়া হয় । আওয়ামীলীগ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বলেন , শেষপর্যন্ত হুমায়ুন সাহেবের রোজ গার্ডেন বাড়িতে সম্মেলনের কাজ শুরু হয়েছিল । শুধু কর্মীরা না , অনেক রাজনৈতিক নেতাও সেই সম্মেলনে যোগদান করেন । সকলেই একমত হয়ে নতুন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করলেন তার নাম দেওয়া হলো ” পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ । মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি,জনাব শামছুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং আমাকে করা হলো জয়েন্ট সেক্রেটারি ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ :

পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা দখল করেই বাংলা ও বাঙালিকে পদানত রাখার পরিকল্পনা করে । প্রথমেই আঘাত হানে ভাষার ওপর । তারা উর্দূকে রাষ্ট্র ভাষা ঘোষণা করে । এর প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু ১৯৪৮ সালের ২ মার্চ ফজলুল হক মুসলিম হলে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠনের প্রস্তাব করেন এবং এর প্রেক্ষিতে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন , ছাত্রসভায় আমরা সকলেই যোগদান করালাম । হঠাৎ কে যেন আমার নাম প্রস্তাব করে বসল সভাপতির আসন গ্রহণ করার জন্য । সকলেই সমর্থন করল । বিখ্যাত আমতলায় এই আমার প্রথম সভাপতিত্ব করতে হলো ।
১৯৫২ সালে বঙ্গবন্ধু জেলে থাকাকালীন অবস্থায় ভাষার জন্য অনশন শুরু করেন । পরবর্তীতে জেলথেকে ছাড়া  পেয়ে তিনি আবার আন্দোলন শুরু করনে । তিনি আরো বলেন , আমি সাধারণ সম্পাদক (আওয়ামী মুসলিম লীগের) হয়েই একটা প্রেস কনফারেন্স করলাম । তাতে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করতে হবে , রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে হবে এবং যারা ২১শে ফেব্রুয়ারী শহীদ হয়েছেন তাঁদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দান এবং যারা অন্যায়ভাবে জুলুম করেছে তাদের শাস্তির দাবি করলাম ।

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জীবনী - বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানা অজানা তথ্য

 

যুক্তফ্রন্ট :

পকিস্তানের স্বাধীনতা লাভের পর মুসলিমলীগ পকেট সংগঠনে পরিণত হলে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে শেরেবাংলা , ভাষানী ও হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দীর নেতৃত্বে ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর চারটি দল নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয় । যুক্তফ্রন্টের প্রতীক ছিল নৌকা । নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিশাল ব্যবধানে জয়ী হয় । এই নির্বাচনে প্রথমবারের মত অংশগ্রহণ করে বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জ আসন থেকে নির্বাচিত হন । নির্বাচনের পর শেরেবাংলা এ.কে. ফজলুল হক সরকার গঠন করেন । বঙ্গবন্ধু সর্বকনিষ্ট মন্ত্রী হিসেবে সমবায় ও কৃষিঋণ মন্ত্রণলায়ের দায়িত্ব লাভ করেন ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর কারাগার থেকে কারাগারে :

১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারির চারদিন পর বঙ্গবন্ধুকে নিরাপত্তা আইনে আটক করা হয় । প্রায় ১৪ মাস আটক রাখার পর মুক্তিপান তিনি । তবে আবার জেলগেট থেকে তাঁকে আটক করা হয় । প্রায় দুই বছর করাগারে থাকেন এসময় । ১৯৬১ সালে হাইকোর্টের নির্দেশে তিনি মুক্তিপান । ১৯৬২ সালে জননিরাপত্তা আইনে আবার তাঁকে গ্রফতার করা হয় । পরবর্তীতে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন প্রকাশিত হলে বঙ্গবন্ধু এর সমালোচনা করেন এবং এর তীব্র প্রতিবাদ জানান ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ঐতিহাসিক ছয় দফা :

 

ছয়দফা কর্মসূচি পাকিস্তানের দু অংশের মধ্যকার বৈষম্য এবং পূর্ব বাংলায় পশ্চিম পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ উপনিবেশিক শাসনের অবসানের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ ঘোষিত কর্মসূচি । তাসখন্দ চুক্তির মাধ্যমে ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের অবসানের পর পূর্ব পাকিস্তানের নিরাপত্তার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের চরম অবহেলা ও ঔদাসীন্যের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোচ্চার হন । ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী পাকিস্তানের আইয়ুব বিরোধী রাজণৈতিক দল সমূহের জতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় । এই সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ এতিহাসিক ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন । ছয় দফা দাবির প্রথম দফা ছিল ” লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে সংবিধান রচনা করে পাকিস্তানকে একটি ফেডারেশনে পরিণত করতে হবে , যেখানে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার থাকবে এবং প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের ভোটে নির্বাচিত আইন পরিষদ সার্বভৌম হবে ” ।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা :

 

পাকিস্তান সরকার ১৯৬৮ সালের জানুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করে সেনাবাহিনীর কয়েকজন কর্মরত ও প্রাক্তন সদস্য এবং ঊর্ধ্বতন সরকারি অফিসারদের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করে । তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে , তারা ভারত সরকারের সহায়তায় সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন । ভারতের ত্রিপুরার আগরতলা শহরে ভারতীয় পক্ষ ও আসামি পক্ষদের মধ্যে এ ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে মামলায় উল্লেখ থাকায় একে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বলা হয় । বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে এ মামলা এবং এর প্রতিক্রিয়া বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ । ১৯৬৮ সালের ১৯ জুন ৩৫ জনকে আসামি করে পাকিস্তান দন্ডবিধির ১২১-ক ধারা এবং ১৩১ ধারায় মামলার শুনানি শুরু হয় । মামলায় শেখ মুজিবকে ১ নম্বর আসামি করা হয় এবং ” রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান গং’ “নামে মামলাটি পরিচালিত হয় । পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের তীব্র আন্দোলনের মুখে পাকিস্তান সরকার অচিরেই মামলাটি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জীবনী - বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানা অজানা তথ্য

১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান :

১৯৬৬ সালের ৬ দফা দাবি ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ , বাঙালির ম্যাগনাকার্টা । ১৯৬৭ সালের ১৬ জুন নির্ভিক সাংবাদিক তোফাজ্জল হোসেনের ইত্তেফাক পত্রিকা বাজেয়াপ্ত করা হয় । ২৩ জুন রবীন্দ্র সঙ্গীত প্রচার নিষিদ্ধ করা হয় । ১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধু কে প্রধান আসামী করে মোট ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আগরতলা মামলা করে তাদের উপর নির্যাতন করা হয় । ফলে সারা দেশে ছাত্র আন্দোলন শুরু হয় । ১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারী ছাত্র সমাজ ঐতিহাসিক ১১ দফা দাবি উত্থাপন করে । ৮ জানুয়ারী ৮ টি রাজনৈতিক দল নিয়ে DAC গঠিত হয় । ২০ জানুয়ারী ছাত্রনেতা আসাদ পুলিশের গুলিতে শহীদ হন । আন্দোলন তীব্র হয় । ১৫ ফেব্রয়ারী আগরতলা মামলার আসামী সার্জেন্ট জহুরুল হককে কারাকারের ভেতরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় ।

বাংলাদেশ নামকরণ :

১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামীলীগের জনসভায় বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন ” জনগনের পক্ষ থেকে আমি ঘোষণা করছি , আজ হতে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম পূর্বপাকিস্তানের পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ
’ হবে ” ।

 

৭০ এর নির্বাচন :

১৯৭০ সালের ৬ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন । বঙ্গবন্ধু ১৯৭০ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহনের সিদ্ধান্ত নেন । নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নির্বাচনী প্রতীক ছিল নৌকা , স্লোগান ছিল ‘জয় বাংলা’ আর ঘোষণাপত্র ছিল ছয় দফা । বাংলাদেশের আনাচে কানাচে নৌকার পক্ষে গণজোয়ার তৈরি হয় । নির্বাচনে আওয়ামীলীগ পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯ টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন লাভ করে । পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮৮টি লাভ করলেও আওয়ামীলীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয় না । এ জন্যই ১৯৭০ সালের নির্বাচনকে পাকিস্তানের মৃত্যুর বার্তাবাহক বলা হয় ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর যা সকল নিয়োগ পরীক্ষায় অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ 

অসহযোগ আন্দোলন :

১৯৭০ সালের নির্বাচন ছিল এক ব্যক্তি এক ভোট নীতির প্রথম নির্বাচন । ৩ মার্চ ১৯৭০ সালে আ.স.ম. আবদুর রব বঙ্গবন্ধুকে ‘জাতির পিতা’ উপাধি প্রদান করেন । এই সমাবেশে বক্তৃতা কালে বঙ্গবন্ধু আসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন ।

৭ই মার্চের ভাষণ :

১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ তারিখে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে রোজ শুক্রবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ ভাষণ প্রদান করেন । সময় বিকাল ৩ট ২০ মিনিট । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনা বলেন , এর ব্যাপ্তিকাল ছিল ২৩ মিনিট তবে ১৮-১৯ মিনিট রেকর্ড করা হয় । রেকর্ড করেন এ এইচ খন্দকার এবং চিত্র ধারণ করেন আবুল খায়ের এমএনএ । গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৫ম তফসিলে জাতির পিতার এ ভাষণ সন্নিবেশিত হয় । এ ভাষণেই বঙ্গবন্ধু বলেন ” আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না । আমরা এদেশের মানুষের অধিকার চাই ” ৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু ৪ দফা দাবি তুলে ধরেন । যেমন –

১. প্রথমে মার্শাল ল উইথড্র করতে হবে ।

২. সমস্ত সামরিক বাহিনীর লোকদের ব্যারাকে ফেরত যেতে হবে ।

৩. যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তার তদন্ত করতে হবে ।

৪. জনগণের প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে ।

 

স্বাধীনতার ঘোষনা :

১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ ঢাকাসহ সারাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীরা নিরীহ মানুষদের উপর অমানুষিক অত্যাচার শুরু করে । শুধু ঢাকাতেই ৫০ হাজারের বেশী মানুষ হত্যা করে তারা । ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হওয়ার আগে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন । ২৬শে মার্চ চট্রগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে সর্বপ্রথম এম.এ.হান্নান নিজের কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা পাঠ করেন । বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থের ভূমিকাতে বলেন , ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে স্বাধীনতার ঘোষনা দেওয়ার পরপরই আমাদের ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর সড়কের পাকিস্তনি সেনাবাহিনী হানা দেয় এবং আমার পিতাকে গ্রফতার করে নিয়ে যায় ।

মুজিবনগর সরকার :

১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল কুষ্টিয়ার মহেরপুরের বৈদ্যনাথ তলার ভবেরপাড়া গুামের আম্রকাননে মুজবনগর সরকার গঠিত হয় । ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ দেশ-বিদেশের ১২৭ জন সাংবাদিকের সামনে মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণ করে । মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । তবে বঙ্গবন্ধু জেলে থাকার কারনে সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দ্বায়িত্ব পালন করেন । মুজিব নগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাজ উদ্দিন আহমদ । যুদ্ধ পরিচালনার সুবিধার্তে মুজিব নগর সরকার সমগ্র বাংলাদেশকে ১১ টি সেক্টরে ভাগ করে ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জীবনী - বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানা অজানা তথ্য

স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি :

দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর ৩০ লক্ষ্য শহীদ ও দুই লক্ষ্য মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমারা স্বাধীনতা লাভ করি । ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ৯৩ হাজার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রেসকোর্সের ময়দানে আত্মসমর্পন করে । প্রতিষ্ঠিত হয় জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ । আর এই স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ছিলেন বঙ্গপন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ।

স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও সংবিধান রচনা :

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা লাভের পর ২২ ডিসেম্বর মুজিবনগর সরকার ঢাকায় এসে শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করে । ১০ ডিসেম্বর ১৯৭২ সালে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধান রচনায় মনোনিবেশ করেন । ১১ জানুয়ারী ১৯৭২ স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
‘অস্থায়ী সংবিধান’ আদেশ জারি করেন । বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ গণপরিষদ আদেশ জারি করেন । ১০ এপ্রিল ১৯৭২ গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন বসে । ১১ এপ্রিল ড.কামাল হোসেনকে সভাপতি করে ৩৪ সদস্য বিশিষ্ট সংবিধান কমিটি গঠন করা হয় । কমিটির একমাত্র বিরোধী দলীয় সদস্য ছিল সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এবং একমাত্র মহিলা সদস্য ছিল রাজিয়া বানু । খসড়া কমিটি ৪৭টি বৈঠকের মাধ্যমে খসড়া চুড়ান্ত করে । ১২ অক্টোবর ১৯৭২ সালে খসড়া সংবিধান গণ পরিষদে উত্থাপন করা হয় এবং ৪ নভেম্বর ১৯৭২ তা গৃহীত হয় । প্রতি বছর ৪ নভেম্বর সংবিধান দিবস হিসেবে পালন করা হয় । ১৫ ডিসেম্বর সংবিধানে স্বাক্ষর করা হয় এবং ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭২ থেকে তা কার্য়কর হয় । বাংলাদেশের সংবিধানে মোট ১টি প্রস্তাবনা , ১১টি ভাগ , ১৫৩টি অনুচ্ছেদ এবং ৭টি তফসিল রয়েছে । রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি ৪টি । এ পর্যন্ত সংবিধানে মোট ১৬ বার সংশোধনী আনা হয়েছে ।

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জীবনী - বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানা অজানা তথ্য

 

ফিদেল কাস্ত্রের সাক্ষাত :


১৯৭৩ সালে আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের শীর্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাক্ষাতের পর কিউবার মহান বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো বলেছিলেন , ” আমি হিমালয় দেখিনি কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি । ব্যক্তিত্ব এবং সাহসিকতায় তিনিই হিমালয় ” ।

সংবিধান সংশোধন ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার :

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর রেসকোর্স ময়দানে এক ঘোষণার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার ঘোষনা দেন । Bangladesh Collaborators ( Special tribunals ) Order 1972 নামে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য প্রথম আইন পাস হয় । পরবর্তীতে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হয় । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর আমলে সংবিধান মোট ৪ বার সংশোধন করা হয় । যুদ্ধবন্দীদের বিচার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালে প্রথম সংশোধনী আনা হয় । রাষ্ট্রপতির পদ সৃষ্টি,মেয়াদ ও জরুরী অবস্থার বিধান রেখ ২য় সংশোধনী আনা হয় । ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত চুক্তির আলোকে ৩য় সংশোধনী আনা হয় । এবং ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারী সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যভস্থার প্রবর্তন করা হয় ।

অসমাপ্ত আত্মজীবনী :

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লিখিত আত্মজীবনী মূলক প্রথম গ্রন্থ ‘ অসমাপ্ত আত্মজীবনী ’ । ২০১২ সালের জুন মাসে বইটি ‘ দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড ‘ থেকে প্রকাশিত হয় । বইটির প্রকাশক মহিউদ্দিন আহমেদ , প্রচ্ছদ সমর মজুমদার এবং গ্রন্থস্বত্ব ‘ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ’ । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড.ফকরুল আলম স্যার ‘The Unfinished Memoirs’ নামে বইটির ইংরেজি অনুবাদ করেন । ২০১৭ সাল পর্যন্ত বইটি মোট ৮টি ভাষায় প্রকাশিত হয় । সর্বশেষ হিন্দি ভাষায় অনুদিত হয় । হিন্দি ভাষায় বইটি অনুবাদ করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রাণলায় । ১৯৬৭-১৯৬৯ সালে কারাকারে থাকাকালীন বঙ্গবন্ধু বইটি লেখেন । বইটি লিখতে বঙ্গবন্ধুকে প্রেরণা দেন তার স্ত্রী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৪ সালে ফজলুল হক মনির ড্রয়ার খেকে এর মূল পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ করেন । ২০০৭ সালের ৭ আগস্ট সাব জেলে থাকাকালীন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বইটির ভূমিকা লেখেন।বইটিতে বঙ্গবন্ধু তাঁর পূর্ব পুরুষদের ইতিহাস সহ বাল্যকাল থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত নিজের জীবনের বিভিন্ন ঘটনা লিপিবদ্ধ করেছেন । প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে চট্টগ্রামর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষা বর্ষের পাঠ্যসূচীতে বইটির ইংরেজি অনুবাদ The Unfinished Memoirs অন্তর্ভূক্ত করা হয় ।

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জীবনী - বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানা অজানা তথ্য

কারাগারের রোজনামচা :

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচিত আত্মজীবনী মূলক দ্বিতীয় গ্রন্থ
‘কারাগারের রোজনামচা’ । ২০০৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রন্থটির পাণ্ডুলিপি খুঁজে পান । বইটি ২০১৭ সালের ১৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ৯৮ তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসে ঐতিহাসিক বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত হয়।পাণ্ডুলিপি আনুযায়ী বঙ্গবন্ধু এর নাম দিয়েছিলেন “থালাবাটি কম্বল/জেলখানার সম্বল” । বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা বইটির নামকরণ করেন ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থটিতে ১৯৬৬-১৯৬৮ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর কারাবাসের চিত্র তুলেধরেছেন । গ্রন্থটির প্রচ্ছদ শিল্পী তারিক সুজাত । বঙ্গবন্ধু এই গ্রন্থটিতে তাঁর জেল জীবনের পাশাপাশি জেল যন্ত্রনা ,কয়েদীদের অজানা কথা , অপরাধীদের কথা , কেন তারা এই অপরাধে লিপ্তহলো ইত্যাদি । তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি , আওয়ামীলীগ নেতাদের দুঃখ দুর্দশা , সংবাদ মাধ্যমের অবস্থা , শাসকগোষ্ঠীর নির্মম নির্যাতন প্রভৃতি তুলে ধরেছেন । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরি ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড.ফকরুল আলম স্যার বইটির ইংরেজি অনুবাদ করেন এবং তা বাংলা একাডেমী থেকে ‘প্রিজন ডায়েরী’ নামে প্রকাশিত হয় । বইটির ভূমিকা লিখেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা ও বর্তমান বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । বইটির গ্রন্থস্বত্ব হচ্ছে ” জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ” ।

 

ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড :

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সেনাবাহিনীর কিছু সংখ্যক বিপথগামী সদস্য ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবনে বঙ্গবন্ধু ও সপরিবারকে হত্যা করে । এর মধ্য দিয়ে বাঙালির ইতিহাসে এক কালিমালিপ্ত অধ্যায় সংযোজিত হয়েছিল । দুই জন পুলিশ কর্মকর্তা সহ এইদিন ঘাতকরা মোট ১৮ জনকে হত্যা করে । তাদের হাত থেকে বঙ্গবন্ধুর শিশু পুত্র শেখ রাসেলও রেহাই পায়নি । বাংলাদেশের ইতিহাসে এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের পেছনে ছিল খন্দকার মোশতাক , মেজর ডালিম সহ কতিপয় বিপথগামী সদস্যের হাত । যাদের জন্য বঙ্গবন্ধু সারা জীবন লড়াই করেছেন তাদেরই কিছু বিপথগামী ক্ষমতালোভীর হাতেই রচিত হয় বাংলার ইতিহাসের কলঙ্কময় দিন । বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতের এই ১৫ই আগস্ট দিনটি জাতি শোকদিবস হিসেবে পালন করে থাকে ।

 

বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার :

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর দায়মুক্তি আইন বাতিল করে আওয়ামী লীগ সরকার এবং ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী মহিতুল ইসলাম বাদী হয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মামলা করেন । ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল তৃতীয় বিচারক মোহাম্মদ ফজলুল করিম ২৫ দিন শুনানীর পর অভিযুক্ত ১২ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ নিশ্চিত করেন । ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর থেকে ২০০৯ সালের ২৪ আগস্ট পর্যন্ত বাদী-বিবাদীর আপিলের প্রেক্ষিতে চার দফায় রায় প্রকাশ হয় , সর্বশেষ আপিল বিভাগ ২০১০ সালের ৫ অক্টোবর থেকে টানা ২৯ কর্মদিবস শুনানি করার পর ১৯ নভেম্বর চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন । এতে ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর করা হয় ।

শেষকথা :


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জীবনী শীর্ষক উপরিউক্ত দীর্ঘ আলোচনার প্রেক্ষিতে আলোচনার শেষপ্রান্তে এসে আমরা বলতে পারি যে , ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর প্রান্তরে বাংলার শেষ নবাব সিরাজুদ্দৌলার সাথে বেইমানি করেছিল তাঁরই সেনাপতি মীল জাফর ক্ষমতার লোভে , নবাব হওয়ার আশায় । ১৯৭৫ সালেও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছিল । স্বাধীন বাংলাদেশর প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তাঁরই মন্ত্রীপরিষদের সদস্য খন্দকার মোশতাক । ইতিহাস স্বাক্ষ দেয় যে ক্ষমতা লোভীরা স্থায়ী হতে পারেনি মীর জাফর তিন মাসও ক্ষতায় ছিল না । তেমনি ভাবে খন্দকার মোশতাকও তার রাষ্ট্রপতি পদ তিন মাসও রাখতে পারেনি । বাংলার বুকে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে এবং বাকীদেরও হবে ইনশাআল্লাহ ।

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জীবনী - বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানা অজানা তথ্য

 

 তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া, অসমাপ্ত আত্মজীবনী বই, কারাগারের রোজনামচা বই, শেখ মুজিব আমার পিতা বই ইত্যাদি।  

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর যা সকল নিয়োগ পরীক্ষায় অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ 

আজকের আমাদের প্রতিবেদনটি ভালো লাগলে লাইক ও শেয়ার করুন এবং অন্যদের জানার সুযোগ করে দিন । এছারাও কমেন্টের মাধ্যমে আপনার সুযোগ্য মতামত জানতে ভুলবেন না ।

 https://www.facebook.com/priyojanala

আমাদের ফেইসবুক পেইজ- প্রিয়জানালা

 

 

Back to top button