bangla moviemoviestop 10

গত দশকের বাংলাদেশের সেরা ১০ সিনেমার রিভিউ – বাংলা সিনেমা রিভিউ

হলিউড, বলিউডের মত বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি পরিচিত ঢালিউড নামে । বিগত দশকগুলোতে বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ড্রাস্টি ধুঁকতে থাকলেও সম্প্রতি কিছু আলোচিত চলচ্চিত্রের হাত ধরে আবারো জেগে উঠছে বাংলা সিনেমা । চলুন আজ জেনে নেয়া যাক সবচেয়ে হিট করা বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের নাম ।
Best Bangla Movie

মনপুরা ( Monpura )

মনপুরা ২০০৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলাদেশী চলচ্চিত্র । ছবিটি রচনা ও পরিচালনা করেছেন গিয়াস উদ্দিন সেলিম । গল্পে দেখানো হয় , গভীর রাতে প্রভাবশালী গাজীর মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলে হালিম একটা খুন করে ফেলে । গাজী সাহেবের ছেলেকে রক্ষা করতে স্ত্রীর পরামর্শে বাড়ির এতিম কাজের ছেলে সোনাইকে মনপুরা দ্বীপে নির্বাসনে পাঠানো হয় যাতে সবাই সোনাইকে দোষী ভাবে । মনপুরা চরে সোনাইয়ের সঙ্গে দেখা হয় পরীর । পরী মাঝির মেয়ে , চরের দিকে মাছ ধরতে আসে বাবার সঙ্গে । যত দিন গড়ায় সোনাই আর পরী ততই একে অপরের কাছাকাছি আসে । একদিন চরে এসে গাজী দেখে ফেলে পরীকে এবং চিন্তা করে পাগল ছেলে হালিমের সঙ্গে পরীর বিয়ে দেবে । এই মেয়ে সুন্দর এবং গরিব । অতএব মেয়ের বাবাকে লোভ দেখিয়ে পাগল ছেলের বিয়ে ঠিক করে গাজী । সোনাই আর পরী পালিয়ে যাবে , কিন্তু সোনাই ধরা পড়ে পুলিশের হাতে । এরপরের ঘটনাটি কাদিয়েছে বহু মানুষ ।

আয়নাবাজি ( Aynabaji )

মুভিটি পরিচালনা করেন অমিতাভ রেজা চৌধুরী । ২০১৬ সালে আয়নাবাজি মুভিটি মুক্তি পায় । গল্পে আয়না একজন সংগ্রামী অভিনেতা , যে তার ক্যারিয়ারে ব্যর্থ হওয়ার পরে বাস্তব পেশায় তার পেশাটিকে বাচিঁয়ে রাখতে চান । তিনি একটি বহুমুখী চরিত্রের একজন মানুষ এবং তিনি যাকে চান তার মধ্যে রূপ দিতে পারেন । যখন যেমন চরিত্র ভাল্লাগে তখন তেমন চরিত্রকে নিজের করে চলতে থাকেন । একসময় টাকার জন্য ভুল পথ বেছে নেন আয়না , আর আয়নার আয়নাবাজির খেলা চলতে থাকে মাসের পর মাস , কেউই ধরতে পারে না । গল্পটিতে ঢাকার অন্ধকার দিক তুলে ধরা হয়েছে , যা শাসক শ্রেণি এবং নগরবাসী গণমানুষের মধ্যে অবিচ্ছিন্ন লড়াইয়ের চিত্র ফুটিয়ে তুলে । যেখানে প্রভাবশালী ধনীরা টাকার যোগ্যতায় মানুষকে কিনে নিতে পারে ।

দেবী ( Debi )

দেবী ২০১৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলাদেশী রহস্যধর্মী চলচ্চিত্র । মুভিটি পরিচালনা করেছেন অনম বিশ্বাস । চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছে বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের বিখ্যাত মিসির আলি ধারাবাহিকের একই নামের প্রথম উপন্যাস থেকে । কাহিনীতে বিয়ের পর থেকেই রানুর মধ্যে অস্বাভাবিকতা ঠের পায় তার স্বামী আনিস । তাই তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগে ক্লিনিক্যাল সাইকিয়াট্রির খণ্ডকালীন শিক্ষক মিসির আলির কাছে নিয়ে যায় । মিসির আলি রানুর কাছে থেকে তার ছোটবেলার একটি ভয়াবহ গল্পের বর্ণনা শুনেন এবং এই রহস্যের অনুসন্ধানে বের হন । ইতোমধ্যে রানুর জীবনের এই রহস্যের সাথে সাথে জড়িয়ে পড়ে তাদের বাড়িওয়ালার মেয়ে নীলু , যা আরেকটি রহস্যময় ঘটনার দিকে নিয়ে যায় ।

পোড়ামন ২ ( Puramon 2 )

মুভিটি মুক্তি পায় ২০১৮ সালে । পরিচালক ছিলো রায়হান রাফি । সিনেমার শুরুতেই বিচ্ছেদের সুর । এরপর কেটে যায় বছর দশেরক । আমরা দেখতে পাই সিনেমা পাগল এক তরুণের যিনি প্রয়াত সালমান শাহের অন্ধ ভক্ত সুজন শাহ । তালুকদার বাড়ির মেয়ে পরী তাকে ভালোবাসে কিন্তু কোন পাত্তাই পায় না সুজনের কাছে থেকে । এভাবেই এগিয়ে যায় সিনেমার গল্প । সুজন এক সময় পরীর ডাকে সাড়া দেয় । তাদের ভালোবাসায় বাঁধা দেয় তালুকদার সাহেব এবং তাঁর ছেলে মকসেদ , কারন এক কামলার ভাই সুজন । প্রেমের পরিণতি জেনেই তারা দুজন পালিয়ে যাবার সময় ধরা পড়ে । পরিচালক এখানেই একটি নির্মম সত্য তুলে ধরেন ।

শিকারি ( Shikari )

শিকারি মুভিটি ২০১৬ সালে মুক্তি পায় । শিকারি বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত চলচ্চিত্র । মুভিটি পরিচালনা করেছেন জাকির হোসেন সীমান্ত ও জয়দীপ মুখার্জী । কলকাতার একটি স্থানে হঠাৎ করে কিছু নিখোঁজ বাচ্চার লাশের হাড়গোড় খুঁজে পাওয়া গেল । এরপর সেই কেসের তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হলো জজ রুদ্র চৌধুরীর উপর । ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি সব কিছু করতে পারেন । তাই হত্যাকান্ডের মূল ভিলেন ভয় পেয়ে যায় । নিজের মিশন ঠিক-ঠাক রাখতে সে জজকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিলো । এই দায়িত্ব দেওয়া হলো বাংলাদেশের কন্ট্রাক্ট কিলার সুলতানকে । জজকে শ্যূট করতে গিয়ে সে লক্ষ করে এটা তার নিজের বাবা । পিতাকে বাঁচানোর জন্য অভিনব কায়দায় জজের বাড়িতে বাবুর্চি হিসেবে আশ্রয় নেয় সুলতান । নায়িকার কাছেই সবার আগে ধরা দেয় সুলতান । এগুতে থাকে নায়ক-নায়িকার প্রেম ।

নবাব ( Nabab )

নবাব হচ্ছে ২০১৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত জয়দীপ মুখার্জী পরিচালিত ইন্দো-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র । যৌথভাবে চিত্রনাট্য লিখেছেন পেলে ভট্টাচার্য ও জয়দীপ মুখার্জী । সিবিআই অফিসার রাজিব চৌধুরী জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে বদ্ধ পরিকর । মুখ্যমন্ত্রী অনন্যা চ্যাটার্জি সন্ত্রাসী হামলা থেকে রক্ষা করার পর তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে । বেশ কিছু নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে । একটি টেলিভিশন চ্যানেলের ক্রাইম রিপোর্টার সালমার উপর দায়িত্ব পড়ে রাজিব চৌধুরীর একটি সাক্ষাৎকার নেওয়ার । এক সময় দেখা হয়ে যায় তাঁদের । আগে থেকেই একে অপরকে চিনলেও পরে আবিষ্কৃত হয় সালমার সঙ্গে একই কলেজে পড়াশোনা করা নবাবই আসলে সিবিআই অফিসার রাজিব চৌধুরী । তাঁরা দুজন দুজনকে পছন্দ করতেন সেই কলেজ থেকেই । বিভিন্ন কারণে মাঝে বিচ্ছিন্ন হয়েছেন । সালমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের শুরু হতে না হতেই ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হয় রাজীব চৌধুরীকে । অবশেষে , ষড়যন্ত্রের পর্দা সরে সব পরিষ্কার হয়ে যায় ।

ঢাকা অ্যাটাক ( Dhaka Attack )

২০১৭ সালের বাংলাদেশি রোমাঞ্চকর নাট্যধর্মী চলচ্চিত্র ঢাকা অ্যাটাক । এটি পরিচালনা করেছেন দীপংকর সেনগুপ্ত এবং রচনা করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সানী সানোয়ার । একটি কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি থেকে চুরি হয় কিছু কেমিক্যাল আর ঘটে যায় কিছু খুন । পুলিশ জানায় কেমিক্যালগুলো তেমন দামীও নয় এবং এর পিছনে মোটিভ হিসেবে থাকতে পারে ফ্যাক্টরির মালিকের সাথে পূর্ব শত্রুতা । কিন্তু এই সিদ্ধান্তে ভাটা পড়ে একই ধরনের আরেকটি খুনের পর। এবার শুরু হয় ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বোমা বিস্ফোরণ । ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার এই তদন্তের দ্বায়িত্ব দেন গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তা সাজেদুল করিমকে । পুলিশ কমিশনার আবিদ রহমান নেতৃত্বে নতুন দল গঠন করেন এই হামলা প্রতিহত করার জন্য । পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে ওঠে আসে , এইসব হামলার পিছনে মূল হোতার ছবি , যে ঢাকা শহর ধ্বংসের মাধ্যমে মালয়েশিয়া আন্ডারওয়ার্ল্ডের প্রধান হতে চায় ।

অগ্নি ( Agnee )

অগ্নি ২০১৪ সালে মুভিটি মুক্তি পায় । পরিচালনা করেন ইফতেখার চৌধুরী । তানিশা তার বাবা-মা হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য কামালের আস্তানায় ঢুকে তাকে হত্যা করে । কিন্তু বাকি হত্যাকারীদের খুজে পেতে তাকি পাড়ি জমাতে হয় থাইল্যান্ডে । থাইল্যান্ডে গিয়েই তানিশা ছদ্মবেশ ধারন করে । এদিকে কামালের মৃত্যূর খবর গুলজার এর কানে যায় । গুলজারই তানিশার বাবার মূল হত্যাকারী । গুলজার তানিশা কে মারার জন্য ড্রাগন কে পাঠায় । তানিশা ড্রাগনের মামা কাবিলার বাসা ভাড়া নেয় । ড্রাগন তানিশার প্রেমে পড়ে যায় । কিন্তু ড্রাগন জানতো না তানিশাই ছদ্মবেশি কিলার এবং তাদেরই কিলার যাদের ড্রাগন নিরাপত্তা দেয় । ডেনের পর শিবা সানুকে মারার পরপরই ড্রাগন টের পেয়ে যায় তানিশা ছদ্মবেশি কিলার্ । এদিকে হায়দারও গুলজার জেনে যায় তানিশাই ছদ্মবেশি কিলার এবং সে ড্রাগনের প্রেমিকা । হায়দার লোক পাঠায় ড্রাগন কে মারার জন্য । শেষদিকে তানিশা এবং ড্রাগন এক হয়ে গুলজার ও হায়দার কে হত্যা করে ।

ভালোবাসার রঙ ( Bhalobashar Rong )

ভালোবাসার রঙ হচ্ছে ২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলাদেশী চলচ্চিত্র । মুভিটি পরিচালনা করেছেন শাহীন-সুমন ও জাজ মাল্টিমিডিয়ার ব্যানারে প্রযোজনা করেছেন শীষ মনোয়ার । বাপ্পি তার বন্ধুদের নিয়ে গ্রামে দস্যিপনা করে বেড়ায় । একদিন তার বন্ধুর সাহায্যে সামসুদ্দিন চৌধুরী বাড়িতে ঢোকে । সেখানে চৌধুরীর নাতনী মাহীকে দেখে তার প্রেমে পড়ে । মাহীর প্রেম লাভের আশায় সে চৌধুরীর ছড়ি এবং মাহীর চাচীর প্রিয় টেপ রেকর্ডার চুরি করে । চুরি করে পালানোর পথে খড়ের গাদায় লুকিয়ে থাকার সময় বর্শার আঘাতে আহত হয় । আহত বাপ্পির অবস্থা দেখে এবং মাহীর প্রতি তার ভালোবাসার টান থেকে মাহীও তাকে পছন্দ করে । এরই মধ্যে আবির্ভাব হয় সালাম জোয়ার্দারের । সে চৌধুরীর পালিত নাতনী মাহীকে তুলে নিতে আসে । তুফানের হাত থেকে বাঁচাতে বাপ্পি মাহীকে নিয়ে নির্জন পাহাড়ে চলে যায় ।

গেরিলা ( Guerrilla )

গেরিলা ২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলাদেশী চলচ্চিত্র । নাসির উদ্দীন ইউসুফ পরিচালিত এই চলচ্চিত্রটি মূলত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত । বিলকিস এই গল্পের মূল চরিত্র । বিলকিসের স্বামী হাসান ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে নিখোঁজ হন । বিলকিস অসুস্থ শ্বাশুড়ীর দেখাশোনা , নিজের ব্যাংকের চাকরি , নিখোঁজ হাসানের খোঁজ নেয়ার পাশাপাশি ঢাকার গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিজেকে জড়িয়ে নেয় । সময়ের আবর্তে ১৯৭১ এর আগস্ট মাসের শেষ দিকে একটি বড় অপারেশনের পর ঘটনা পরিক্রমায় ঢাকা ছাড়তে হয় বিলকিসকে । বিলকিস নিজগ্রাম রংপুরের জলেশ্বরী যাবার জন্য ট্রেনে পাড়ি জমায় । কিন্তু তারই ছোটভাই খোকনের দল ওদিকে একটি রেলব্রীজ উড়িয়ে দেওয়ায় তার ট্রেনযাত্রা ব্যাহত হয় । দৃঢ়চিত্ত বিলকিস হেঁটেই এগিয়ে চলে বাড়ীর পথে । খোকন বাহিনীর এক তরুন মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ বিলকিসের যাত্রাসঙ্গী হয় । বাড়ির পথে নানা ঘটনার পাশাপাশি নিজের বাড়ি লুট হওয়া আর আপন মামার উপর মিলিটারী-রাজাকারদের নির্যাতন দেখে শিউরে উঠে সে । অতঃপর একমাত্র ভাই খোকনকে দেখবার তীব্র আকাঙ্ক্ষায় জাগে বিলকিসের । কিন্তু দুর্ভাগ্য , এরইমধ্যে জবাই করা হয়েছে খোকনকে । ভাইয়ের লাশ দাফন করতে গিয়ে বন্দি হয় পাকিস্তানি মিলিটারীর হাতে । তবে শেষ পর্যন্ত বীরের মতো আত্নাহুতি দেয় বিলকিস । নিজের সাথে উড়িয়ে দেয় একটি গোটা মিলিটারী ক্যাম্প ।

Back to top button